অর্থনীতিকে ‘আরও শক্তিশালী’ করার জন্য স্বাস্থ্য, কৃষি ও মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন পরিকল্পনায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবে যাতে ভবিষ্যতে যে কোনো বিপর্যয় কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায়।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান ইউএনবিকে বলেন, কোভিড-১৯ মহামারির প্রভাবে সৃষ্ট এই স্থবিরতা থেকে আবার অর্থনীতিকে গতিশীল করার জন্য আগামী বাজেটে বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে।
স্বাস্থ্য, কৃষি ও মেগা প্রকল্পগুলো এই পরিকল্পনায় অগ্রাধিকার পাবে বলে তিনি জানান।
স্বাস্থ্য খাতের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রয়োজনের তুলনায় ডাক্তার, নার্স, আইসিইউ এবং ভেন্টিলেটর সংখ্যা কম রয়েছে। আমাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে।’
এমএ মান্নান উল্লেখ করেন, দেশের অনেক অঞ্চলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সরঞ্জামের অভাব বা ঘাটতি রয়েছে।
‘যদি এই মহামারিটি ফের দেখা দেয়, যে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই বলেছে, তাহলে আমাদের সেটিকে মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে ... আমাদের স্বাস্থ্য খাতকে আরও উন্নত করতে হবে,’ তিনি বলেন।
স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ আগের বছরের তুলনায় আরও বেশি হবে বলে মন্ত্রী মনে করেন।
কৃষিখাত সম্পর্কে আলাপকালে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যয়ের পরে স্বাভাবিকভাবেই কৃষিতে মনোনিবেশ করা হবে। ‘এই খাত এখনও আমাদের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে রয়ে গেছে। বেশিরভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এই খাতে জড়িত। আমার ধারণা অনুযায়ী সরকার এই খাতকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেবে।’
তিনি অবশ্য সৃষ্টিকর্তা এবং এবার কৃষিখাতে জড়িত কর্মীদের বোরো উৎপাদন বাম্পার হওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন যা আগামী দিনের কঠিন সময়ে দেশের জন্য এক বিশাল শক্তি হয়ে উঠবে।
তবে আমলাতন্ত্রিক রাজনীতির কারণে ভবিষ্যতে ইউরিয়া ও বীজসহ সারের প্রাপ্যতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘কৃষির প্রধান সহচর সার, আমরা বিদেশ থেকে ইউরিয়া সার সংগ্রহ করি, এই সার ছাড়া আমরা এত বেশি ফসল উৎপাদন করতে পারব না। ‘পরবর্তী ফসলে’র জন্য বর্তমান মজুদ পর্যালোচনা করার পরে আমাদের তাৎক্ষণিক সংগ্রহের জন্য যেতে হবে।’
তিনি বলেন, বাংলাদেশ তার উৎপাদনের জন্য বীজ আমদানি করে এবং এটি আসন্ন সময়ের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ গোটা বিশ্ব করোনা প্রাদুর্ভাবে ভুগছে।
মান্নান আমদানির উপর নির্ভরতা হ্রাস করতে ভবিষ্যতে কৃষকদের নিজস্ব ভালো মানের বীজ সংরক্ষণ করার আহ্বান জানান। ‘আমরা অবিলম্বে যারা (ব্যক্তি বা কোম্পানি) বীজ আমদানি করে তাদের সতর্ক করে দিচ্ছি যাতে আমরা পরের ফসলগুলো সঠিকভাবে উৎপাদন করতে পারি।’
মন্ত্রী বলেন, যদি দেশ কোনো বাধা ছাড়াই পরবর্তী ফসল উৎপাদন করতে পারে তবে এটি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এবং পুরো অর্থনীতির জন্য এক বিরাট স্বস্তির খবর হবে।
মান্নান বড়-ছোট নির্বিশেষে সকল আবাদি জমির মালিককে নিজ জমি উৎপাদনের জন্য ব্যবহারের উপর জোর দিয়েছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী পদ্মা বহুমুখী সেতু এবং মেট্রো রেল কাজের সমাপ্তের উপরও গুরুত্ব দেন যা জাতীয় অর্থনীতিকে জোরদার করবে।
প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প থেকে সরকারের প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার নির্দেশ অনুযায়ী তহবিল স্থানান্তর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মহামারিজনিত কারণে এই প্রকল্পগুলোর কার্যক্রম বা সেগুলোর জন্য অর্থ ব্যয় কম-বেশি স্থগিত থাকায় এটি সহজেই করা যায়।
‘এটি সম্ভব ... এক মাসেরও বেশি সময় ধরে এই প্রকল্পগুলোতে কোনো কাজ নেই। যদি তাদের কার্যক্রম পুরোপুরি চালু থাকত তবে তারা অর্থ ব্যয় করতে পারত,’ তিনি বলেন।
তারা অর্থ ব্যয় করছে না উল্লেখ করে এমএ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি যে প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তাতে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
‘তারা যদি জুনের আগে সঠিকভাবে কাজ করতে না পারে বা সীমিত পরিসরে কাজ করে, তবে এই প্রকল্পগুলোতে বিপুল অর্থ অব্যবহৃত থাকবে,’ তিনি যোগ করেন।